এই ব্লগে আমি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার গুরুত্ব, সাধারণ জ্ঞান শেখার পদ্ধতি, গণিত অংশের জন্য টিপস, ইংরেজি অংশে ভালো করার কৌশল, পরীক্ষার জন্য মানসিক প্রস্তুতি এবং প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করবো।
এই ব্লগটি আমি ৬টি পর্বে বিভক্ত করবো।
পর্ব ১: বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার গুরুত্ব এবং সার্বিক প্রস্তুতি কৌশল (Importance of BCS Preliminary Exam and Overall Preparation Strategy)
এই পর্বে আমরা বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার গুরুত্ব এবং সার্বিক প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার গুরুত্ব:
বিসিএস পরীক্ষার প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এই পরীক্ষাকে বলা হয় বিসিএস পরীক্ষার মূল প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রথম ধাপ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে পরবর্তী ধাপ, অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায় না। তাই, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেই হবে।
সার্বিক প্রস্তুতি কৌশল:
- পরিকল্পনা: প্রথমেই একটি রুটিন তৈরি করে ফেলুন। কোন দিন কোন বিষয় পড়বেন, কতক্ষণ পড়বেন, সব কিছু রুটিনে উল্লেখ করুন।
- সিলেবাস: বিপিএসসি কর্তৃক প্রকাশিত সিলেবাসটি ভালোভাবে দেখুন। কোন কোন টপিক পড়তে হবে, সেগুলো চিহ্নিত করুন।
- বই: বাজারে অনেক বই পাওয়া যায়। তবে, সব বই না কিনে, মানসম্মত এবং নির্ভরযোগ্য বই কিনুন।
- পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন: পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করুন। এতে করে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা পাবেন এবং নিজের প্রস্তুতি যাচাই করতে পারবেন।
- মডেল টেস্ট: নিয়মিত মডেল টেস্ট দিন। এতে করে পরীক্ষার পরিবেশের সাথে পরিচিত হবেন এবং সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
- রিভিশন: নিয়মিত রিভিশন দিন। এতে করে পড়াগুলো ভালোভাবে মনে থাকবে।
- ধৈর্য: বিসিএস পরীক্ষা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। তাই, ধৈর্য ধরে প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে হবে।
এই পর্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কী-ওয়ার্ড:
- বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার গুরুত্ব
- সার্বিক প্রস্তুতি কৌশল
- বিসিএস পরীক্ষার পরিকল্পনা
- বিসিএস সিলেবাস
- বিসিএস পরীক্ষার বই
- পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন
- মডেল টেস্ট
- রিভিশন
- ধৈর্য
পর্ব ২: সাধারণ জ্ঞান শেখার কার্যকরী পদ্ধতি (Effective Methods for Learning General Knowledge)
এই পর্বে আমরা বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সাধারণ জ্ঞান অংশের জন্য কার্যকরী শেখার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।
সাধারণ জ্ঞানের পরিধি:
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান অংশে বাংলাদেশ বিষয়াবলি (৩০ নম্বর), আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি (২০ নম্বর), ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (১০ নম্বর) এবং নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন (১০ নম্বর) থেকে প্রশ্ন আসে।
সাধারণ জ্ঞান শেখার কার্যকরী পদ্ধতি:
- সংবাদপত্র: নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ুন। দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে আপডেট থাকুন।
- টেলিভিশন: টেলিভিশনের খবর দেখুন। গুরুত্বপূর্ণ টকশো গুলো দেখার চেষ্টা করুন।
- অনলাইন রিসোর্স: নির্ভরযোগ্য অনলাইন রিসোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
- মানচিত্র: বাংলাদেশ ও বিশ্বের মানচিত্র ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। বিভিন্ন দেশের অবস্থান, রাজধানী, মুদ্রা, ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা রাখুন।
- সাল-তারিখ: গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর সাল-তারিখ মনে রাখার চেষ্টা করুন।
- নোবেল পুরষ্কার, অস্কার পুরষ্কার, বুকার পুরষ্কার: বিভিন্ন পুরষ্কার প্রাপ্তদের তালিকা সম্পর্কে ধারণা রাখুন।
- সংস্থা ও সংগঠন: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠন সম্পর্কে জানুন।
- মুখস্থবিদ্যা: কিছু তথ্য মুখস্থ করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে, বুঝে বুঝে মুখস্থ করার চেষ্টা করুন।
- গ্রুপ স্টাডি: বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডি করতে পারেন। এতে করে অনেক কঠিন বিষয় সহজে আয়ত্ত করা যায়।
এই পর্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কী-ওয়ার্ড:
- সাধারণ জ্ঞান
- বাংলাদেশ বিষয়াবলি
- আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি
- ভূগোল
- পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
- নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
- সংবাদপত্র
- টেলিভিশন
- অনলাইন রিসোর্স
- মানচিত্র
- সাল-তারিখ
- পুরষ্কার
- সংস্থা ও সংগঠন
- মুখস্থবিদ্যা
- গ্রুপ স্টাডি
পর্ব ৩: গণিত অংশের জন্য টিপস (Tips for Mathematics Section)
এই পর্বে আমরা বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার গণিত অংশের (গাণিতিক যুক্তি – ১৫ নম্বর) জন্য কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো।
গণিত অংশের সিলেবাস:
- পাটিগণিত: বাস্তব সংখ্যা, ল.সা.গু, গ.সা.গু, শতকরা, সরল ও যৌগিক মুনাফা, অনুপাত ও সমানুপাত, লাভ ও ক্ষতি।
- বীজগণিত: বীজগাণিতিক সূত্রাবলি, বহুপদী উৎপাদক, সরল ও দ্বিপদী সমীকরণ, সরল ও দ্বিপদী অসমতা, সরল সহসমীকরণ।
- জ্যামিতি: রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, ক্ষেত্রফল ও বৃত্ত সংক্রান্ত উপপাদ্য, পিথাগোরাসের উপপাদ্য, পরিমিতি-সরল ক্ষেত্র ও ঘনবস্তু।
গণিত অংশের জন্য টিপস:
- সূত্র: প্রথমেই সূত্রগুলো ভালোভাবে মুখস্থ করে ফেলুন।
- অনুশীলন: নিয়মিত অনুশীলন করুন। যত বেশি অনুশীলন করবেন, তত বেশি দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
- শর্টকাট: অংক দ্রুত সমাধানের জন্য শর্টকাট টেকনিক শিখুন।
- পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন: পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করুন। এতে করে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
- মডেল টেস্ট: নিয়মিত মডেল টেস্ট দিন। এতে করে সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
- ভয়: গণিতকে ভয় পাবেন না। নিয়মিত অনুশীলন করলে গণিত সহজ মনে হবে।
- দুর্বলতা: কোন টপিকে দুর্বলতা থাকলে সেটাতে বেশি সময় দিন।
- বেসিক: গণিতের বেসিক ক্লিয়ার না থাকলে, বেসিক থেকে শুরু করুন।
এই পর্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কী-ওয়ার্ড:
- গণিত
- গাণিতিক যুক্তি
- পাটিগণিত
- বীজগণিত
- জ্যামিতি
- সূত্র
- অনুশীলন
- শর্টকাট
- পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন
- মডেল টেস্ট
- গণিতের ভয়
- দুর্বলতা
- বেসিক
পর্ব ৪: ইংরেজি অংশে ভালো করার কৌশল (Strategies to Excel in English Section)
এই পর্বে আমরা বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ইংরেজি অংশে (English Language & Literature – ৩৫ নম্বর) ভালো করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো।
ইংরেজি অংশের সিলেবাস:
- Language (২০): Parts of Speech, Idioms & Phrases, Clauses, Corrections, Sentence & Transformations, Words, Composition.
- Literature (১৫): Names of writers of literary pieces from the Elizabethan period to the 21st Century, Quotations from drama/poetry of different ages. 1 1. theexamly.com theexamly.com
ইংরেজি অংশে ভালো করার কৌশল:
- গ্রামার: গ্রামারের নিয়মগুলো ভালোভাবে শিখুন।
- ভোকাবুলারি: প্রতিদিন নতুন নতুন শব্দ শিখুন।
- রিডিং: ইংরেজি পত্রিকা, বই, ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস করুন।
- রাইটিং: নিয়মিত ইংরেজি লেখার অভ্যাস করুন।
- পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন: পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করুন। এতে করে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
- মডেল টেস্ট: নিয়মিত মডেল টেস্ট দিন। এতে করে সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
- ইংরেজি সাহিত্য: ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত সাহিত্যিকদের নাম, তাদের লেখা বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম, এবং বিভিন্ন উক্তি সম্পর্কে ধারণা রাখুন।
- অনুবাদ: বাংলা থেকে ইংরেজি এবং ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করার অভ্যাস করুন।
- ভুল: ভুল থেকে শিখুন। কোন ভুল হলে সেটা কেন হলো, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন এবং পরবর্তীতে একই ভুল যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
এই পর্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কী-ওয়ার্ড:
- ইংরেজি
- English Language & Literature
- গ্রামার
- ভোকাবুলারি
- রিডিং
- রাইটিং
- পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন
- মডেল টেস্ট
- ইংরেজি সাহিত্য
- অনুবাদ
- ভুল
পর্ব ৫: পরীক্ষার জন্য মানসিক প্রস্তুতি (Mental Preparation for the Exam)
এই পর্বে আমরা বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য মানসিক প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
মানসিক প্রস্তুতির গুরুত্ব:
বিসিএস পরীক্ষার জন্য শুধু পড়াশোনা করলেই হয় না, মানসিক প্রস্তুতিও অত্যন্ত জরুরি। পরীক্ষার হলে আত্মবিশ্বাসের সাথে পরীক্ষা দিতে হলে মানসিক প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন।
মানসিক প্রস্তুতির জন্য কিছু টিপস:
- আত্মবিশ্বাস: নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। বিশ্বাস করুন যে আপনি পারবেন।
- ইতিবাচক মনোভাব: ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করুন। নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা থেকে দূরে থাকুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম: পরীক্ষার আগে পর্যাপ্ত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ।
- পুষ্টিকর খাবার: পরীক্ষার সময় পুষ্টিকর খাবার খান।
- মেডিটেশন: নিয়মিত মেডিটেশন করুন। এতে করে মন শান্ত থাকবে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: পরীক্ষার চাপ কিভাবে সামলাতে হয়, সেটা শিখুন।
- টাইম ম্যানেজমেন্ট: পরীক্ষার হলে সময় ব্যবস্থাপনার দিকে খেয়াল রাখুন।
- রিলাক্সেশন: পরীক্ষার আগে রিল্যাক্স থাকার চেষ্টা করুন।
- লক্ষ্য: নিজের লক্ষ্য স্থির রাখুন এবং লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান।
এই পর্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কী-ওয়ার্ড:
- মানসিক প্রস্তুতি
- আত্মবিশ্বাস
- ইতিবাচক মনোভাব
- পর্যাপ্ত ঘুম
- পুষ্টিকর খাবার
- মেডিটেশন
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
- টাইম ম্যানেজমেন্ট
- রিলাক্সেশন
- লক্ষ্য
পর্ব ৬: প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণের গুরুত্ব (Importance of Analyzing Question Papers)
এই পর্বে আমরা বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণের গুরুত্ব:
বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করলে প্রশ্নের ধরন, কোন কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, প্রশ্নের মান, ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণের পদ্ধতি:
- বিগত বছরের প্রশ্ন: প্রথমেই বিগত ৫-১০ বছরের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করুন।
- টপিক ভিত্তিক বিশ্লেষণ: প্রতিটি প্রশ্ন কোন টপিক থেকে এসেছে, সেটা চিহ্নিত করুন।
- প্রশ্নের ধরন: প্রশ্নগুলো কি জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক, নাকি প্রয়োগমূলক, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন।
- গুরুত্বপূর্ণ টপিক: কোন কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, সেটা চিহ্নিত করুন।
- দুর্বলতা: আপনার কোন কোন টপিকে দুর্বলতা আছে, সেটা চিহ্নিত করুন এবং সেই টপিকগুলোতে বেশি সময় দিন।
- রিপিট প্রশ্ন: কোন কোন প্রশ্ন বার বার রিপিট হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করুন।
এই পর্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কী-ওয়ার্ড:
- প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ
- বিগত বছরের প্রশ্ন
- টপিক ভিত্তিক বিশ্লেষণ
- প্রশ্নের ধরন
- গুরুত্বপূর্ণ টপিক
- দুর্বলতা
- রিপিট প্রশ্ন
পরিশেষে, বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম এবং নিয়মিত অনুশীলন। এই ব্লগটি আপনাদের বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে বলে আশা করি।