IP অ্যাড্রেস কী? ইন্টারনেট প্রোটোকল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ইন্টারনেট প্রোটোকল (IP Address): ইন্টারনেটের ঠিকানা ব্যবস্থা

আমরা যখন চিঠি পাঠাই, তখন খামের উপর ঠিকানা লিখতে হয় যাতে চিঠিটি সঠিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছায়। ঠিক একইভাবে, ইন্টারনেটে ডেটা আদান-প্রদানের জন্য প্রতিটি ডিভাইসের একটি অনন্য ঠিকানা প্রয়োজন। এই ঠিকানাটিই হলো ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস বা IP অ্যাড্রেস

IP অ্যাড্রেস কী?

IP অ্যাড্রেস হলো একটি সংখ্যার সমষ্টি যা ইন্টারনেটে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসকে সনাক্ত করে। এটি একটি লজিক্যাল ঠিকানা যা নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ডের সাথে যুক্ত থাকে। যখন আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তখন আপনার ডিভাইস (কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট) একটি IP অ্যাড্রেস ব্যবহার করে অন্যান্য ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ করে।

IP অ্যাড্রেসের প্রকারভেদ:

প্রধানত দুই ধরনের IP অ্যাড্রেস রয়েছে:

  • IPv4 (Internet Protocol version 4): এটি 32-bit সংখ্যা দিয়ে গঠিত এবং “.” (dot) দ্বারা পৃথক চারটি অংশে বিভক্ত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, 192.168.1.100 একটি IPv4 অ্যাড্রেস।
  • IPv6 (Internet Protocol version 6): IPv4 অ্যাড্রেসের সংখ্যা সীমিত হওয়ায় IPv6 চালু করা হয়। এটি 128-bit সংখ্যা দিয়ে গঠিত এবং “:” (colon) দ্বারা পৃথক আটটি অংশে বিভক্ত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, 2001:0db8:85a3:0000:0000:8a2e:0370:7334 একটি IPv6 অ্যাড্রেস।

IP অ্যাড্রেস কিভাবে কাজ করে?

IP অ্যাড্রেস ডেটা প্যাকেটগুলোকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। যখন আপনি কোন ওয়েবসাইটে ভিজিট করেন, তখন আপনার কম্পিউটার ওয়েবসাইটের সার্ভারের IP অ্যাড্রেসে ডেটা প্যাকেট পাঠায়। সার্ভার প্যাকেটগুলো গ্রহণ করে এবং আপনার কম্পিউটারে ওয়েবসাইটের তথ্য পাঠায়।

IP অ্যাড্রেসের গুরুত্ব:

  • অনন্য সনাক্তকরণ: IP অ্যাড্রেস প্রতিটি ডিভাইসকে অনন্যভাবে সনাক্ত করে।
  • যোগাযোগ: IP অ্যাড্রেস ডিভাইসগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে।
  • অবস্থান নির্ণয়: IP অ্যাড্রেস থেকে ডিভাইসের আনুমানিক অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব।

IP অ্যাড্রেস কে দেয়?

  • Internet Assigned Numbers Authority (IANA): IANA বিশ্বব্যাপী IP অ্যাড্রেস বণ্টন করে।
  • Regional Internet Registries (RIRs): RIRs বিভিন্ন অঞ্চলে IP অ্যাড্রেস বণ্টন করে।
  • Internet Service Providers (ISPs): ISPs তাদের গ্রাহকদের IP অ্যাড্রেস প্রদান করে।

IP অ্যাড্রেসের শ্রেণিবিভাগ (IPv4):

IPv4 অ্যাড্রেস পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত:

  • Class A: বৃহৎ নেটওয়ার্কের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • Class B: মাঝারি আকারের নেটওয়ার্কের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • Class C: ছোট নেটওয়ার্কের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • Class D: মাল্টিকাস্ট অ্যাড্রেসিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • Class E: পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়।

IP অ্যাড্রেস সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • Static IP Address: এই ধরনের IP অ্যাড্রেস স্থায়ী হয় এবং পরিবর্তিত হয় না।
  • Dynamic IP Address: এই ধরনের IP অ্যাড্রেস সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।
  • Private IP Address: এই ধরনের IP অ্যাড্রেস স্থানীয় নেটওয়ার্কের মধ্যে ব্যবহৃত হয় এবং ইন্টারনেটে সরাসরি ব্যবহার করা যায় না।
  • Public IP Address: এই ধরনের IP অ্যাড্রেস ইন্টারনেটে সরাসরি ব্যবহার করা যায়।
  • Subnet Mask: এটি একটি 32-bit সংখ্যা যা নেটওয়ার্ক এবং হোস্ট অংশ সনাক্ত করতে সাহায্য করে।

DNS (Domain Name System):

আমরা যখন কোন ওয়েবসাইটে ভিজিট করি, তখন ওয়েবসাইটের নাম (যেমন, [ভুল URL সরানো হয়েছে]) টাইপ করি। কিন্তু কম্পিউটার শুধুমাত্র IP অ্যাড্রেস বুঝতে পারে। DNS ওয়েবসাইটের নামকে IP অ্যাড্রেসে রূপান্তর করে।

IP অ্যাড্রেস এবং নিরাপত্তা:

IP অ্যাড্রেস থেকে আপনার অবস্থান এবং অন্যান্য তথ্য জানা সম্ভব। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। VPN (Virtual Private Network) ব্যবহার করে আপনার IP অ্যাড্রেস লুকিয়ে রাখা যায়।

উপসংহার:

IP অ্যাড্রেস ইন্টারনেটের একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ। এটি ডিভাইসগুলোকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে এবং ডেটা আদান-প্রদান করতে সাহায্য করে। IP অ্যাড্রেস সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে ইন্টারনেট আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।

Scroll to Top